Tuesday, July 22, 2014

সন্তানকে ‘কোটিপতি’ দেখতে চাইলে


সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন মা-বাবা। কীভাবে গড়বেন সন্তানের ভবিষ্যৎ বা কীভাবেই বা তাকে দেবেন উপযুক্ত শিক্ষা। আপনার সন্তানকে পরবর্তী জাকারবার্গ বা ল্যারি পেজ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে আপনাকেই সচেতন হতে হবে। সন্তানের জন্য আপনার করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে উদ্যোক্তা চার্লস টিপস ১২টি পরামর্শ দিয়েছেন। প্রশ্ন-উত্তর ভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘কোরা’তে প্রকাশিত টিপসের এ পরামর্শগুলো তুমুল জনপ্রিয় হয়েছে। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তথ্যপ্রযুক্তি ও ব্যবসাবিষয়ক ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডার।
প্রথম ধাপ: জীবনের নানাদিক সম্পর্কে জানান 
টিপসের মতে, সন্তানকে জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। সন্তানকে জীবনে অসংখ্য পথের মধ্যে থেকে নিজের পথ চিনে নিতে বলতে হবে এবং জীবনের এই পথের বাঁকে বাঁকে যে সুযোগ, সম্ভাবনা ও বিপদ রয়েছে, সে সম্পর্কে জানাতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপ: পড়াশোনা হোক বিশেষ নিয়মে
তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কিংবা অন্যান্য ক্ষেত্রের কোটিপতিদের ১২ গ্রেড পর্যন্ত পড়াশোনার ইতিহাস কমই রয়েছে। টিপসের মতে, বিলিওনিয়ারের মতো বিশেষ শ্রেণির হতে গেলে পড়াশোনা হওয়া চাই বিশেষ শ্রেণির মতো। সব সময় প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতির সঙ্গে যে তা মানানসই হবে, এমন কথা নয়। টিপস বলেন, তাঁর নিজের সন্তানেরা ছোটবেলা থেকেই ছোটখাটো কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। তারা নিয়মিত ভ্রমণ করে। নিজেদের কাজের উপযোগী প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো রপ্ত করেছে তারা। টিপসের মতে, ‘যদি সন্তানের মধ্যে মামুলি মানসিকতা তৈরি করতে চান, তাহলে মামুলি বা প্রচলিত শিক্ষা দেবেন।’
ধাপ ৩: কাজকে ভালোবাসতে শেখান
শিশুকে অলস করে তুলবেন না। কারণ, টিপসের মতে, ‘বড়লোক হতে গেলে কাজ করতে হয়।’ কাজ করার জন্য চাই অধ্যবসায়, ধৈর্য ও সহ্যশক্তি।
ধাপ ৪: মানুষকে ভালোবাসতে শেখান
মানুষকে ভালোবাসলেই কেবল মানুষের মনের আসল খবর জানতে পারবেন একজন উদ্যোক্তা। একজন মানুষের সত্যিকার অর্থে কোন পণ্য প্রয়োজন পড়ে এবং তাঁরা সেটা কিনতে চান কি না, সেটা মানুষের কাছে গেলে বোঝা যায়। টিপসের পরামর্শ হচ্ছে, ‘সন্তানকে বোঝাতে হবে যে সে কারও চেয়ে বেশি কিছু নয় আবার কারও চেয়ে কমও নয়। সবার সঙ্গে মেশার মানসিকতা তৈরি করতে বলতে হবে।’
ধাপ ৫: উদারতা দেখাতে শেখান
সবার প্রতি উদার হন। উদার হওয়া বলতে অর্থসম্পদ বোঝাননি টিপস। কারও বিপদে-আপদে পাশে থেকেও উদারতা দেখানো যায়। টিপস বলেন, ‘আসল সম্পদ হচ্ছে সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানো। অন্যের পাশে দাঁড়ানোর মতো সুযোগ থাকলে তা পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হবে। সময় না দিয়ে শুধু অর্থ সাহায্য করলে তাতে দূরত্ব বাড়ে।’
ধাপ ৬: মানসিক যোগসূত্র তৈরির শিক্ষা
একটি উদ্যোগকে সফল করা কতটা কঠিন, যাঁরা এটা করেন কেবল তাঁরাই এটা উপলব্ধি করতে পারেন। উদ্যোগের এই কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে সন্তানকে পরিচয় করিয়ে দিন। নিজের ক্ষেত্রে যদি এমন বাস্তবতা না দেখেন তবে যাঁর এমন অভিজ্ঞতা আছে, তার কাছে সন্তানকে শিখতে পাঠান। টিপসের মতে, ‘ব্যর্থতা জিনিসটা কী, সেটার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া উচিত এবং এই ব্যর্থতা থেকে কীভাবে অনুপ্রেরণা নিতে হয়, সেটা শেখানো উচিত।’
ধাপ ৭: মিথ্যা, প্রতারণা ও চুরি
আপনি যদি সন্তানকে শুধু ভালো মানুষের সংসর্গে থাকার শিক্ষা দেন, তবে তারা খারাপ লোকদের নিয়ে কীভাবে চলতে হয় তা শিখবে না। কু-প্রকৃতির লোকের সঙ্গে কীভাবে চলতে হবে এবং তাদের হারিয়ে কীভাবে ব্যবসা সামনে এগিয়ে নিতে হবে, সে শিক্ষাটাও দিতে হবে। টিপসের মতে, ‘পৃথিবীতে মন্দ লোকের অভাব নেই। এ জন্য আপনার সন্তানের মধ্যে একটি রাডার তৈরি হওয়া প্রয়োজন যাতে ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝে সে চলতে পারে। মানুষের চরিত্র বোঝার জন্য তাদের সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। খারাপ আচরণ ও ভালো আচরণের পার্থক্য বুঝিয়ে খারাপ থেকে তাদের দূরে সরিয়ে ভালো আচরণের শিক্ষা দিতে হবে।
ধাপ ৮: লেখাপড়া অন্তরায় নয়
আপনার সন্তান যদি পরীক্ষায় খুব ভালো না করে কিংবা অনেক বন্ধু বানিয়ে ফেলে, তবে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। উদ্যোক্তা তৈরিতে এ ধরনের বিষয়গুলো ভূমিকা রাখতে পারে। টিপস দাবি করেন, ‘আমি অনেক উপাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা স্বীকার করেছেন ভবিষ্যতে সিইও হিসেবে তৈরি হবে এমন কোনো শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় দু-একটি বিষয়ে অকৃতকার্য না দেখলে তাঁরা কিছুটা হতাশই হন।’
ধাপ ৯: ভালো করে হিসাব শেখান
আপনার সন্তানকে খুব ভালো করে হিসাব করা শেখান। গণিতে দক্ষ হলে ভালো। দ্রুত কোনো বিষয় যাতে হিসাব করে ফেলতে পারে, সে বিষয়ে তাদের শিক্ষা দিন। টিপসের মতে, ঠিকমতো হিসাব করতে না পারলে পরে কোনো চুক্তি করতে গেলে সমস্যায় পড়ে যাবে আপনার সন্তান।
ধাপ ১০: অর্থ বরাদ্দ বা চাকরি নয়
অনেক ক্ষেত্রে সন্তানকে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে কাজে লাগিয়ে দিলে তার উদ্যোগ সফল হয়। কিন্তু টিপস সন্তানের জন্য অর্থ বরাদ্দের পক্ষপাতী নন। তাঁর মতে, সন্তানকে যদি স্ব-উদ্যোগে কোটিপতি দেখতে চান তবে তাঁর পেছনে অর্থ ঢালা বন্ধ করতে হবে। অর্থ আয়ের জন্য আপনার সন্তানকে চাকরি করতে না দেওয়ার পরামর্শও দেন টিপস। তাঁর মতে, অর্থের বিনিময়ে সময় বিক্রি করা মানে লোকসান করা। আপনার সন্তানকে সেলস বা এ ধরনের কোনো বিষয়ে উত্সাহ দিতে পারেন, যাতে এ বিষয়টিতে তার দক্ষতা বাড়ে।
ধাপ ১১: বিনিয়োগে পরামর্শ
সন্তানকে বিনিয়োগের শিক্ষা দিন। কীভাবে ঝুঁকি নিয়ে অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়, তা শেখান। অর্থ ঝুঁকি ও বিনিয়োগ করা না শিখলে অর্থ আয় করাটাও শিখবে না। টিপসের মতে, ‘বিনিয়োগ নয় তো বিলিওনিয়ার নয়।’
ধাপ ১২: নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলা
টিপস বলেন, সন্তানকে যোগ্যতা অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিতে হবে। সাফল্য পেতে কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়, কীভাবে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হয়, সে শিক্ষা দিন। টিপস বলেন, ‘আমি আমার সন্তানদের বলি যে, কোনটি ভালো আর কোনটি মন্দ সে বিষয়ে যত শিগগিরই নিজের অনুভূতিগুলোর সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে, ততই মঙ্গল।’